কিবোর্ড এর পরিচিতি ও আবিষ্কারের তথ্য

 আমরা সকলেই জানি কিবোর্ড সাধারণত কম্পিউটারের কোন প্রোগ্রামে কিছু লেখার জন্য ব্যবহার করা হয় । যার মাধ্যমে আমরা কোন বর্ণমালা, সংখ্যা কমা ও কমা ইত্যাদি চাপলে তা স্ক্রিনে দেখতে পাই। কিবোর্ডের পরিচিতি ও এর আবিষ্কার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ আলোচনা করা হলো।


পোস্ট সূচীপত্রঃ

কিবোর্ড পরিচিতি

হল টাইপ রাইটারের ধারণা থেকে আসা এমন একটি ডিভাইস, যাতে কিছু বাটন বিন্যস্ত থাকে, যেটি মেকানিক্যাল লিভার অথবা ইলেকট্রনিক সুইচের মতো কাজ করে। কিবোর্ড হলো কম্পিউটারের প্রধান ইনপুট ডিভাইস, আমরা অনেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি কিন্তু কিবোর্ড এর কোনটা কি কাজ হাতে গোনা দুই একটা ছাড়া তাও জানিনা। কিবোর্ডে ৮৪ থেকে ১০১ টি বা কোন কোন কিবোর্ডে ১০৪ টি কি আছে। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কিবোর্ডকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা যায়।

  1. ফাংশন কি
  2. এর‌্যো কি বা এডিট কি
  3. আলফাবেটিক কি বা আলফা নিউমেরিক কি 
  4. নিউমেরিক কি বা লজিক কি
  5. বিশেষ বা কমান্ড কি

ফাংশন কি ও এর‌্যো কি

ফাংশন কি: কিবোর্ড এর উপরের দিকে বাম পাশে  F1 থেকে  F12 পর্যন্ত যেগুলো আছে এদের একত্রে ফাংশন কি বলে। এদের নামকরণের কারণ হচ্ছে এদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা যায়। যেমন কোন প্রোগ্রামের রান ও হেল্প করতে এ কি গুলো ব্যবহার করা হয়।

 এর‌্যো কি : কিবোর্ডের ডান দিকে নিচে পৃথকভাবে চারটি কি আছে। যা দিয়ে খুব সহজেই কার্সরকে , ডানে, বামে, উপরে, নিচে করা যায়। একে এডিট কিও বলে, কারণ টেক্সট এডিটের ক্ষেত্রে এই কি গুলো ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুনঃ symphony-কম দামের বাটন মোবাইল-কম দামে সেরা-symphony

আলফাবেটিক কি ও নিউমেরিক কি

বোর্ড ইংরেজি বর্ণমালা A থেকে Z পর্যন্ত ২৬ টি কি সাজানো থাকে সেই অংশকে আলফাবেটিক সেকশন বা অংশ বলা হয়।

নিউমেরিক কি বা লজিক্যাল কি : কিবোর্ডের ডান দিকে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা লেখা যে কি গুলো রয়েছে তাকে নিউমেরিক কি বলে। এখানে (+)(-)(*)(/) প্রভৃতি  এরিথমেটিক অপারেটর থাকে। তাছাড়াও(<,>)(=) লজিক্যাল অপারেটর গুলো কিবোর্ডে থাকে তাই একে লজিক্যাল কিও বলা হয়।

বিশেষ কি

উল্লেখিত কী গুলো ছাড়া কী-বোর্ডের অন্যান্য কী সমূহ কোনো না কোনো বিশেষ কার্য সম্পাদন করে বলে এদেরকে বিশেষ কী বলা হয়-

Esc : এই কী এর সাহায্যে কোনো নির্দেশ বাতিল করতে হয়।

Tab : পর্দায় প্যারাগ্রাফ, কলাম, নম্বর, অনুচ্ছেদ শুরুর স্থান ইত্যাদি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুতের জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়।

Caps Lock : এই কী ব্যবহার করে ইংরেজি ছোট হাতের ও বড় হাতের লেখা টাইপ করা হয়।

Shift : একই ওয়ার্ডের মধ্যে বা শুরুতে বড় ও ছোট অক্ষর টাইপ করতে এই কী ব্যবহার করা হয়। যেমন : Dhaka, Khulna শব্দ দু’টি লিখতে প্রথম অক্ষরে শিফ্ট কী চেপে ধরে এবং পরের অক্ষরগুলো শিফ্ট কী ছেড়ে দিয়ে লিখতে হবে। আর বাংলা অর বা বর্ণমালা লেখার ক্ষেত্রে অক্ষর বিন্যাস্ত কী এর উপরের ও নিচের লেখা টাইপের জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শিফ্ট কী এর সাথে ফাংশন কী চেপে কম্পিউটারকে বিভিন্ন কমান্ড দেওয়া হয়।

Ctrl : এই কী এর সাথে বিশেষ কী একসাথে চেপে কমান্ড দেওয়া হয়। ব্যবহারকারীর সুবিধার জন্য কীবোর্ডের ডানে ও বামে এই কী ২টি থাকে।

Alt : বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই কী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন কমান্ড তৈরী করা যায়।

Enter : কম্পিউটারকে কোন নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকর করতে এই কী ব্যবহার হয়। লেখালেখির জন্য নতুন প্যারা তৈরী করতেও এই কী ব্যবহার করা হয়।

Pause Break : কম্পিউটারে কোন লেখা যদি দ্রুত গতির জন্য পড়তে অসুবিধা হয় তা হলে এই কী চেপে তা পড়া যায়।

Print Screen: কম্পিউটারের পর্দার দৃশ্যত যা কিছু থাকে তা সব প্রিন্ট করতে চাইলে এই কী ব্যবহার করতে হয়।

Delete : কোনো বাক্য, অক্ষর বা কোনো লেখাকে মুছে ফেলতে এই কী ব্যবহার করা হয়

Home : এই কী ব্যবহার করে কার্সরকে পাতার প্রথমে আনা হয়। তবে MS Word এ কোনো ডকুমেন্ট লেখার সময়ে কার্সর প্রথম পাতায় আনতে হলে Ctrl+Home একসাথে টিপতে হয়।

আরো পড়ুন ঃ যে ১৫ টি বাটন ফোনে দীর্ঘ সময় চার্জ থাকে

End : এই কী চাপলে কার্সর বা পয়েন্টার যেখানেই থাকুক না কেন টেক্সট বা পাতার শেষে চলে আসবে।

Page Up : এই কী ব্যবহার করে কার্সরকে উপরের দিকে উঠানো হয়।

Page Down : এই কী ব্যবহার করে কার্সরকে নিচের দিকে নামানো হয়।

Insert : কোন লেখার মাঝে কোন কিছু লিখলে তা সাধারণত লেখার ডান দিকে লেখা হয়, কিন্তু এই কী চেপে লিখলে তা পূর্ববর্তী বর্ণের উপরে ওভার রাইটিং হয়। কাজ শেষে আবার এই কী চাপলে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।

Back Space : কোন লেখার পিছনের অংশ মুছে ফেলতে এই কী ব্যবহার করা হয়।

Space Bar : কী বোর্ডের কীগুলোর মধ্যে এই কী টি সবচেয়ে লম্বা কোন বাক্য লেখার সময় শব্দ গুলোর মাঝে ফাঁকা করার জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়।

Num Look : এই কী চাপা থাকলে ডান দিকের কী গুলো চালু হয়।

মাল্টিমিডিয়া কি

কয়েকটি বিশেষ কি নিয়ে এই মাল্টিমিডিয়া কি গঠিত হয়, যার সাহায্যে অনেক সহজেই শর্টকাটে কাজ সম্পন্ন করা যায় এগুলো হলো--
Stand by Mood: এই কী চেপে রাখলে কম্পিউটার চালু থাকবে কিন্তু মনিটর বন্ধ হয়ে যাবে।
Mail key : এই কী চেপে আউটলুক এক্সপ্রেস চালু হয় এবং তা দিয়ে মেইল পাঠানো যায়। তবে ইন্টারনেট চালু থাকতে হবে।
Web key : এই কী ব্যবহার করে সরাসরি ওয়েব ব্রাউজার ওপেন করা যায়। এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়।
Start Menu key: এই কী চেপে ষ্টার্ট মেনু ওপেন করা যায় এবং প্রয়োজনীয় কমান্ড করা যায়।

কি বোর্ডের আবিষ্কার

কিবোর্ড এর উদ্ভব সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ইতিহাস নেই। তবে কম্পিউটার কীবোর্ড এর উদ্ভব সম্পর্কে বলা হলো যে, কম্পিউটার কীবোর্ড এর উদ্ভব সাধারণত টাইপরাইটার এর উদ্ভব এর সাথে সম্পর্কিত। আধুনিক কম্পিউটার কিবোর্ডের শুরুটা হয় টাইপরাইটার আবিষ্কারের মাধ্যমে। তবে প্রথম আধুনিক টাইপরাইটার আবিষ্কার করেন ”ক্রিস্টোফার ল্যাথাম” ১৮৬৮ সালে।

কিবোর্ড আবিষ্কারের আগে, কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা কীবোর্ডের পরিবর্তে অন্য বিভিন্ন উপায়ে কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করত। উদাহরণস্বরূপ, তারা টেলিটাইপ মেশিন ব্যবহার করত, যাতে কীবোর্ডের মতো একই রকম কী ছিল। তারা মাউস ব্যবহার করত, যাতে কীবোর্ডের মতো একই রকম বোতাম ছিল।
কিবোর্ড আবিষ্কারের পর, কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা কীবোর্ড ব্যবহার করে কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। কিন্তু, সেই সময়ও কীবোর্ডের সফ্টওয়্যার এখনকার মতো উন্নত ছিল না। তাই, কীবোর্ডের কোডিং করা ছিল একটি কঠিন কাজ।
কিবোর্ডের কোডিং করার জন্য, কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কীবোর্ডের ফিজিক্যাল অংশের সাথে সংযুক্ত একটি ডিভাইস ব্যবহার করত। এই ডিভাইসটি কীবোর্ডের প্রতিটি কী টিপলে একটি নির্দিষ্ট সিগন্যাল তৈরি করত। এই সিগন্যালগুলিকে কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার দ্বারা বোঝা এবং কীবোর্ডের কোড তৈরি করা হত।


কীবোর্ডের কোডিং করার জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসটিকে "ট্যাবলেট" বলা হত। ট্যাবলেটটি কীবোর্ডের প্রতিটি কীয়ের সাথে সংযুক্ত একটি ছোট ইলেকট্রনিক সার্কিট ছিল। এই সার্কিটটি কী টিপলে একটি নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করত। এই বিদ্যুৎ প্রবাহকে কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার দ্বারা বোঝা এবং কীবোর্ডের কোড তৈরি করা হত।
কিবোর্ডের কোডিং করার জন্য, কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা প্রথমে কীবোর্ডের প্রতিটি কীয়ের সাথে সংযুক্ত ট্যাবলেটগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করতেন। তারপর, তারা কম্পিউটারের সফ্টওয়্যারকে কীবোর্ডের প্রতিটি কীয়ের সাথে সংযুক্ত ট্যাবলেট থেকে আসা বিদ্যুৎ প্রবাহগুলিকে কীবোর্ডের কোডে রূপান্তর করতে প্রশিক্ষণ দিতেন।
এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে, কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কিবোর্ডের কোডিং করতে সক্ষম হন। এবং, এর ফলে কিবোর্ড কম্পিউটারের একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়।

বাংলাদেশি কিবোর্ড নির্মাতা

বাংলাদেশী প্রথম কিবোর্ড নির্মাতা মেহেদী হাসান খান। তিনি একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক ও প্রোগ্রামার। তিনি ২০০৩ সালে ইউনিকোড ও এ এন এস আই সমর্থিত বাংলা লেখার বিনামূল্যের ও মুক্ত সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।মেহদী তার প্রথম বাংলা ফন্ট ইউনিবিজয় ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ও ভিজ্যুয়াল বেসিক উপর লেখেন। পরে তিনি অভ্র কিবোর্ড ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়াই লেখেন। অভ্র সম্পূর্ণভাবে ইউনিকোড উপযোগী, যা ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম দ্বারা ২০০৩ সালের ১৪ জুন স্বীকৃত হয়। তিনি তার সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওমিক্রনল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। অভ্র কী-বোর্ড প্রথম উন্মুক্ত করা হয় ২০০৩ সালে ২৬ মার্চ। ওমিক্রনল্যাব থেকে অভ্র উন্মুক্ত করা হয় ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে অভ্র ব্যবহার করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url