হাটুর ব্যথার কারণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার সমূহ

 হাঁটু ব্যথার কারণ কি. যেসব আর্থ্রাইটিস হাঁটুসন্ধিকে আক্রান্ত করে, তার মধ্যে সবচেয়ে কমন টাইপ হচ্ছে অস্টিওআর্থ্রাইটিস। অস্টিওআর্থ্রাইটিস একটি ডিজেনারেটিভ প্রক্রিয়া, যেখানে অস্থিসন্ধির তরুণাস্থি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। মধ্যবয়স্ক এবং বৃদ্ধ বয়সীদের এই কন্ডিশনটি সবচেয়ে বেশি হয়।  কৈশোর ও সদ্য যৌবনে থাকা ছেলেমেয়েদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর তুলনায় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হবার সম্ভাবনা বেশি। 


পোস্ট সূচিপত্রঃ

হাঁটু ব্যথার কারণ কি?

এই ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অস্টিওআথ্রাইটিস বা বয়সজনিত অস্থিসন্ধি ক্ষয়। এ ছাড়া হাঁটুর লিগামেন্টে আঘাত পাওয়া, অস্থিসন্ধির মধ্যে দূরত্ব কমে যাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ইত্যাদি হাঁটুর ব্যথার জন্য দায়ী। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।

অস্টিওআথ্রাইটিস হলে হাঁটুতে ব্যথার পাশাপাশি হাঁটু ফুলে যাওয়া, হাঁটুর সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, হাঁটু লাল বর্ণ হওয়া, গরম অনুভব করা, হাঁটু ভাঁজ করতে সমস্যা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ সময় হাঁটাচলা বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হয়। চলাফেরার সময় হাঁটু ভাঁজ করলে শক্ত মনে হতে পারে, ব্যথা অনুভব হতে পারে। হাঁটুর শক্তি কমে যেতে পারে; ফলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে

আরো পড়ুনঃ দাঁতে গর্ত হলে কি করবেন

মানবদেহের ওজন বহনকারী যে কটি অস্থিসন্ধি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাঁটু। এই হাঁটুর ব্যথা প্রধানত বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি হয়ে থাকে। তবে যেকোনো বয়সেই হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।এটি হাঁটু ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। হাঁটুর সামনে অবস্থিত একটি অস্থির নাম প্যাটেলা। প্যাটেলার আশেপাশে অবস্থিত টেন্ডন বা রগে আঘাত পেলে, প্যাটেলার ফ্রাকচার, কালশিরা, সংযোগকারী তরুণাস্থির ক্ষয়সহ নানাবিধ কারণে হাঁটুসন্ধিতে প্রদাহ, ফুলে যাওয়া, চলাচলে সীমাবদ্ধতা এবং ব্যথা হতে পারে। সিঁড়িতে উঠানামার সময় এবং স্কোয়াটিং এর উপর ব্যথার তীব্রতা নির্ভর করতে পারে।

টেন্ডোনাইটিস  কী

টেন্ডন বা রগে প্রদাহ হলে তাকে মেডিকেলীয় ভাষায় টেন্ডোনাইটিস বলে। প্যাটেলা বা কোয়াড্রিসেপস টেন্ডনে প্রদাহ হলে তাকে “জাম্পার্স নী” নামেও ডাকা হয়। ধারাবাহিক লাফ দেওয়ার মতো কাজে যুক্ত থাকলে এই কন্ডিশনের আর্বিভাব হতে পারে। দৌড়বিদ, স্কি খেলোয়াড়, সাইক্লিস্ট এবং যারা লাফ দেওয়ার মতো স্পোর্টস এ যুক্ত আছেন, তাদের জাম্পার্স নী ডেভেলপ হবার সম্ভাবনা আছে। এই কন্ডিশনে ভুক্তভোগীর প্যাটেলা (নীক্যাপ) এবং টিবিয়া (শিনবোন) এর মাঝামাঝি জায়গায় ব্যথা অনুভূত হয়।

প্রিপ্যাটেলার বার্সাইটিস কেন হয়

আমাদের হাঁটুর সামনে থলির মতো একটি অংশ আছে, যার নাম প্রিপ্যাটেলার বার্সা। এর কাজ হচ্ছে অস্থি এবং পেশি, টেন্ডন বা রগ, লিগামেন্টের মাঝে ঘর্ষন পরিহার করা। দীর্ঘসময় হাঁটু গেড়ে বসে কাজ করলে বা হাঁটুতে সামান্য তীব্রতায় ক্রমাগত আঘাত পেতে থাকলে এই বার্সায় প্রদাহ হয়ে সৃষ্ট কন্ডিশনের নাম প্রিপ্যাটেলার বার্সাইটিস, যা “হাউজমেইড’স নী” নামে পরিচিত। এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে আছে হাঁটুর সামনে ফুলে যাওয়া, ব্যথা, লালচে ভাব, হাঁটুর অস্থিসন্ধি নড়াচড়ায় সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
যারা বাস্কেটবল, সকার, ফুটবলের মতো খেলায় যুক্ত আছেন, তাদের জন্য এন্টেরিয়োর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়াটা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে আছে পায়ে তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, হাটাচলায় অসুবিধা ইত্যাদি।

অস্টিওপরোসিস কী এবং কেন হয়

অস্টিও অর্থ হাড় এবং পরোসিস অর্থ পোরস বা ছিদ্র। সে হিসেবে অস্টিওপরোসিস বলতে বোঝায় যখন হাড়ে বেশি পরিমাণে ছিদ্র থাকে।
হাড়ে বেশি ছিদ্র থাকা মানে বোন ডেনসিটি বা হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া। এতে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সহজেই হাড় ভেঙ্গে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাড় দুর্বল হওয়ার এই স্বাস্থ্যগত অবস্থাই অস্টিওপরোসিস।
হাড়ের দু'টি অংশ থাকে। ওপরের শক্ত আবরণটিকে বলা হয় কমপ্যাক্ট বোন। ভেতরে স্পঞ্জের মতো ছিদ্র ছিদ্র করা স্তরটিকে বলা হয় স্পঞ্জি বোন বা ট্রেবাকুলার বোন।
অস্টিওপরোসিস হলে হাড়ের ওপরের আবরণ বা কম্প্যাক্ট বোন অনেক পাতলা হয়ে যায় এবং স্পঞ্জি অংশটির ছিদ্র বেড়ে যায় বা ঘনত্ব কমে যায়, যা হাড়কে দুর্বল করে ফেলে।

হাড় সাধারণত একদিকে ক্ষয় হতে থাকে আরেকটি গঠন হতে থাকে। যদি ক্ষয় হওয়ার গতি, নতুন হাড় গঠন হওয়ার গতির চাইতে কমে যায়, তখনই অস্টিওপরোসিস হয়।
কম্প্যাক্ট বোনের গঠন প্রতি ১০ বছর অন্তর আর স্পঞ্জি বোন প্রতি তিন বা চার বছর পর পর বদলায়।
মূলত বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় দুর্বল হতে থাকে যা বার্ধক্যের একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে কিছু মানুষের এই হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, মানুষের হাড় সবচেয়ে বেশি মজবুত অবস্থায় থাকে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে। এরপর থেকে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে।

হাঁটুর ব্যথা প্রতিকারের ঘরোয়া প্রতিষেধক

‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ দিয়ে মালিশ: শুধু হাঁটু নয়, শরীরের সকল জোড়ের ব্যথায় মালিশ অত্যন্ত উপকারী। আর এই মালিশের কাজে ‘এসেনশল অয়েল’ ব্যবহার করাটা আরও উপকারী হতে পারে। আদা এবং কমলা থেকে তৈরি ‘এসেনশল অয়েল’ হাঁটু ব্যথা সারাতে সহায়ক। এই তেলগুলো পেশি সিথিল করে এবং আক্রান্ত অংশের ব্যথা কমায়।

তাপ ও ঠাণ্ডা: ব্যথা আক্রান্ত অংশে গরম ভাপ দেওয়া এবং বরফ প্রয়োগ করা দুটোই উপকারী। তবে ব্যথার ধরনের উপর নির্ভর করবে ভাপ নেবেন না কি বরফ ঘষতে হবে।

হাঁটুতে সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকলে গরম ভাপ দেওয়া যাবে না, কারণ তাতে সমস্যার তীব্রতা বাড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি হাঁটুর ব্যথা যেমন- বাতের কারণে হওয়া ব্যথার নিরাময়ে গরম ভাপ দেওয়া অত্যন্ত কার্যকর। আর খেলাধুলা ও দুর্ঘটনা থেকে হওয়া ব্যথায় বরফ প্রয়োগ করতে হবে।

অ্যাপল সাইডার ভিনিগার: এতে থাকা প্রদাহনাশক উপাদান বাতের মতো দীর্ঘমেয়াদি হাঁটু ব্যথা থেকে আরাম দিতে পারে। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার হাড়ের জোড় পিচ্ছিল করে, যা ব্যথা কমাবে এবং নড়াচড়া করতে সুবিধা হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস পানিতে আধা কাপ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করতে হবে প্রতিদিন।


আদার নির্যাস: আদার তেল, নির্যাস কিংবা সরাসরি আদা খাওয়া হাঁটুর জন্য উপকারী। ‘জিনজেরোল’ নামক উপাদানে ভরপুর আদা, যা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক। প্রতিদিন দুকাপ আদা চা পান করলেও উপকার মিলবে।

হলুদ: ঔষধি গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত হলুদ। এতে থাকে আরেকটি শক্তিশালী প্রদাহনাশক উপাদান ‘কারকিউমিন’, যা হাড়ের জোড়ের ব্যথা এবং প্রদাহ সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। এক গ্লাস পানিতে আদা ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে এবং তা প্রতিদিন পান করতে হবে।

লাল মরিচ: ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক উপাদান থাকে এই মরিচে, যা কাজ করে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে। দুই চা-চামচ জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে এক চা-চামচ লাল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে।

ইপসম লবণ: এতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফেট। দুটোই শক্তিশালী ব্যথানাশক উপাদান, পাশাপাশি কমায় ফোলাভাব। গোসলের পানিতে বড় এক চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে তাতে আধা ঘণ্টা ডুবে থাকতে পারেন। 

শেষ কথা

দীর্ঘস্থায়ী ইরিটেশনের কারণে প্যাটেলার চারপাশে অবস্থিত টিস্যু ইলাস্টিসিটি হারিয়ে ফাইব্রোটিক ব্যান্ড এর মতো হয়ে যায়, যার কারণে হাঁটুব্যথা হয়।
আঘাতজনিত কারণে হাঁটুর সামনে অবস্থিত ইনফ্রাপ্যাটেলার ফ্যাট প্যাডে ক্রমাগত ঘর্ষণ বা ইরিটেশনের কারণে এই সিনড্রোমের উদ্ভব হয়, যার কারণে হাঁটুব্যথা অনুভূত হয়।
উপরিক্ত প্রতিকার সমূহ প্রস্তুত করতে আমাদের বেশি কিছু খরচ করতে হবে না। সকল উপকরণগুলো আমাদের বাড়িতেই বিদ্যমান আশা করি তথ্যগুলো অবশ্যই আপনার কাজে দিবে। ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url