মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে জরুরী টিপস সমূহ
সুস্থ মানুষের মস্তিষ্ক সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। মস্তিষ্কের সুস্থ থাকলে মানুষের সুস্থ থাকা সম্ভব। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ সমাজে গ্রহণযোগ্য শীল।মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানীয় ফাংশন সামগ্রিক সুস্থতা এবং জীবনের মানের জন্য মৌলিক।মেমরি, মনোযোগ, সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো মানসিক প্রক্রিয়াগুলি দৈনন্দিন কার্যকারিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং সঠিক কার্যকারিতার উপর নির্ভরশীল। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে যে টিপস গুলো প্রয়োজন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা
এটা আসলেই সত্যি আমরা শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করলে আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে।
ব্যায়ামের কারণে মস্তিষ্কের সাইন্যাপসিস বা যে অংশে দু'টি কোষের নিউরনের মধ্যে স্নায়বিক বৈদ্যুতিক স্পন্দন আদান-প্রদান ঘটে তা বেড়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং অতিরিক্ত কোষ গঠিত হয়।
হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকার মানে হচ্ছে আপনি আরও বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবেন এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারবেন।
আর আপনি যদি বাসার বাইরে বা খোলা যায়গায় শরীর চর্চা করেন তাহলে সেটি আরও বেশি ভালো। কারণ এতে করে আপনি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারবেন।
ব্যায়াম করার সময় নতুন কোনও পরিবেশ ঘুরে দেখুন। এতে অন্য মানুষের সাথে মতামত বিনিময় করা কিংবা তাদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়। এর মাধ্যমে নতুন কোষগুলোর জন্য আপনি একটি সার্কিট তৈরি করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায়
সঠিক খাবার মস্তিষ্কের মূল উপাদান
আপনি যে পরিমাণ শক্তি ও গ্লুকোজ গ্রহণ করেন তার ২০ শতাংশ সরাসরি আপনার মস্তিষ্কে যায়। এ কারণে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে দেহের গ্লুকোজের পরিমাণের উপর।
আপনার দেহের গ্লুকোজের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে আপনার মন ও মস্তিষ্ক অনেকটাই কুয়াশাচ্ছন্ন বা ঝাপসা মনে হতে পারে। আমরা যখন পছন্দের খাবার খাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক নির্গত হয়। এর কারণে আমরা খাওয়ার সময় শান্তি অনুভব করি।
কিন্তু শুধু মস্তিষ্কের ক্ষুধা মেটালেই চলে না, পেটের ক্ষুধাও মেটানো দরকার
মানুষের পরিপাকতন্ত্রে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন অণুজীব থাকে। এরা স্নায়ু ব্যবস্থার মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত থাকে। আর তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে হলে এসব অণুজীবের একটা ভারসাম্য রাখতে হয়।
পেটকে বলা যায় ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’। স্বাস্থ্যকর ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার এসব অণুজীবের মাত্রা ঠিক রাখে এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে।
মস্তিষ্কের কোষ চর্বি দিয়ে গঠিত। তাই খাবার থেকে চর্বি একেবারে বাদ দেয়াটা ঠিক নয়। বিভিন্ন রকমের বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, মাছ, রোজমেরি ও হলুদ থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
একই সাথে একা একা না খেয়ে অনেকের সাথে মিলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। সামাজিকীকরণ আপনার মস্তিষ্কে স্বাস্থ্যকর খাবারের সুফল বাড়িয়ে দেয়।
মস্তিষ্ককে কাজের ভেতরে রাখুন
মস্তিষ্ককে যতটা পারা যায় কাজে লাগাতে হবে। দুঃখের বিষয়, আমাদের মস্তিষ্ক৩০ বছর বয়স থেকে ধীরে ধীরে কাজ কম করতে শুরু করে। আগে ভাবা হতো, এ সমস্যার বোধ হয় কোনো সমাধান নেই। কিন্তু মানুষ যেকোনো বয়সেই তার মস্তিষ্ককে দ্রুত ও কার্যক্ষম করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্ক হলো লার্নিং মেশিন। মস্তিষ্ককে সমর্থ রাখতে নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। যেমন পাজল মেলানো, পিং-পোং বা ব্রিজ তৈরির খেলা, নতুন ভাষা শেখা, বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে বনসাই তৈরি করা ইত্যাদি। এসব কাজে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রেখে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সচল রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ হাঁটুর ব্যথার কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার সমূহ
বয়সকালে মস্তিষ্ককে কার্যকর রাখতে শান্ত থাকা খুব দরকার। সেসঙ্গে দুশ্চিন্তামুক্ত। আমাদের মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হিপ্পোক্যাম্পাস, যা স্মৃতি গঠনের প্রাথমিক স্থান হিসেবে পরিচিত। মানসিক চাপ কিংবা দুশ্চিন্তার কারণে এ অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই যতটা পারা যায়, স্ট্রেসমুক্ত থাকা দরকার। ইয়োগা, মেডিটেশন—এ ধরনের শান্ত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্ককে শান্ত ও প্রখর করতে পারেন।
মস্তিষ্ককে যথেষ্ট বিশ্রাম দিন
মস্তিষ্ককে যেমন খাটানোর কথা বলা আছে, তেমনি মস্তিষ্কের বিশ্রামের কথাও বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আর মস্তিষ্কের বিশ্রামের জন্য যা করতে হবে, তা হলো ঘুম। জটিল কোনো কাজ করার আগে একটু ঘুমিয়ে নিন। ভিডিও গেম নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পাজল মেলানোর মতো কাজ জেগে থাকা ব্যক্তির চেয়ে ঘুমে ঝিমুনি দেয়া ব্যক্তিরা সহজেই সমাধান করতে পারে। এটা থেকে বোঝা যায়, ঘুমন্ত মস্তিষ্ক জটিল তথ্যের সমাধান করতে ব্যাপকভাবে সক্ষম।
মস্তিষ্ককে আপনার ত্বক কিংবা শরীরের মতো তরুণ রাখতে একটু হাসতে হবে। কারণ হাসি মস্তিষ্কের জন্য সুখানুভূতির সৃষ্টি করে। তাছাড়া হাসি মস্তিষ্কের জন্য আনন্দদায়ক, এমনকি ‘নেশা’র মতো। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাস্যরস দুর্বল স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সক্ষম। তাই বেশি বেশি হাসুন আর মস্তিষ্ককে সচল রাখুন। মজার ভিডিও, নাটক এসব দেখে হাসতে পারেন।
মস্তিষ্ক অসুস্থ হয় যেসব কারণে
অপর্যাপ্ত ঘুম,সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান না করা, অতিরিক্ত চাপ এবং শুয়ে বসে থাকা,গুগল সার্চ,হেডফোন ব্যবহার, উচ্চ শব্দে জোরে গান শোনা,একা একা থাকা, সামাজিক না হওয়া,নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষ,অন্ধকারে সময় কাটানো,খাদ্যাভ্যাস,অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম।
অপর্যাপ্ত ঘুম কখনোই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারে না। যথেষ্ট পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। এবং হেডফোন ব্যবহার করে উক্তি শব্দে গান শোনার জন্য মস্তিষ্ক অসুস্থ হয়ে পড়ে এ থেকে যত সম্ভব বিরত থাকায় উচিত। সব সময় সঙ্গবদ্ধ ভাবে চলাফেরা করা কখনো একলা অসামাজিক না হওয়া মস্তিষ্কের বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমাদের করণীয় সমূহ
একটি মানুষের মস্তিষ্ক সুস্থতা এই নিশ্চিত করে একটি মানুষের বাহ্যিক সুস্থতা তার মস্তিষ্কের সুস্থতা অসুস্থ তার উপর নির্ভর করে তার আচরণ ব্যবহার চলাফেরা। সুতরাং আমাদের মস্তিষ্ককে সব সময় সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য উপরে আলোচিত বিষয় সমূহ যথাযথভাবে পালন করা উচিত এতে আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে এবং মস্তিষ্ক সুস্থ থাকলে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব হবে। বিষয়গুলো ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url