দম বাড়ানোর কৌশল ও টিপস

 অনেকেই আছেন, একটু দৌড়লেই অনকে হাঁফিয়ে ওঠেন। দৌড়নোর জন্য আমাদের পেশির প্রচুর পরিমাণে এনার্জি প্রয়োজন হয়। এই সময়ে আমাদের শরীর বেশি মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে যার জন্য শরীরে বাড়তি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এই শ্বাস-প্রশ্বাসের হালকা পরিবর্তনের জন্য অনেকেই একটু দৌড়ে হাঁপিয়ে যান। দৌড়নোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে ও দম বাড়াতে কয়েকটি টিপস মেনে চলুন 

পোস্ট সূচীপত্র

অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া কি একপ্রকার রোগ 

অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যার নেপথ্যে অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি মতো সমস্যাও থাকতে পারে। ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়ে ফুসফুসের প্রসারণ ক্ষমতা কমে গেলে, হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা কমে গেলে বা রক্ত সঞ্চালন কম হলে কিংবা হৃৎপিণ্ডে বুকে ব্যথা হলে হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা হতে পারে।
  • অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার সঙ্গে দ্রুতগতির হূৎস্পন্দন এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • চেহারা নীল হয়ে যাওয়া
  • কথা বলার সময় এক নিঃশ্বাসে কথা শেষ করতে না পারা
  • ঘোরের মধ্যে চলে যাওয়া

এর থেকে পরিত্রাণের কিছু টিপস

অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠলে আতঙ্কিত না হয়ে বরং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। প্রয়োজনে হাসপাতালে গিয়ে অক্সিজেন নিন।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে কিছুটা ওঠে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিন। খুব কষ্ট হলে দেয়ালে ভর দিয়ে দাঁড়াবেন। তখন দেয়ালের সঙ্গে যেন আপনার মাথার এবং শরীরের পেছন দিক ঠেকে থাকে। 
তারপর মাথা আস্তে আস্তে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নিয়ে আর মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে মিনিট খানেক দাঁড়ালেই শ্বাসের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকলে এড়িয়ে চলবেন। পাশাপাশি খনিজসমৃদ্ধ খাবার খাবেন। এ ছাড়া খাদ্যতালিকায় রাখুন অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও। খালি পায়ে মাটিতে হাঁটবেন না। মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ানোর টিপস

প্রাকৃতিকভাবে পুরুষের ফুসফুসের বাতাস ধারণ ক্ষমতা নারীদের ফুসফুসের তুলনায় বেশি হয়। এই ধারণ ক্ষমতা নিচের কিছু উপায়ে বাড়ানো যেতে পারে।

পানি পান: ফুসফুস শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ এবং তার জন্যও পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। শরীরের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকলে ফুসফুসের ‘মিউকোসাল লাইনিং’ বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি পাতলা থাকবে এবং তা ভালোভাবে কাজ করবে।

কার্ডিও এক্সারসাইজ: শুধু হৃদযন্ত্রের জন্য নয়, ফুসফুসের সুস্বাস্থ্যের জন্যও ‘কার্ডিও এক্সারসাইজ’ উপকারী। প্রতিদিন মাত্র আধা ঘণ্টা সময় দিলেও অনেকটা উপকার পেতে পারেন। এই ধরনের ব্যায়াম করার সময় ফুসফুসের উপর বেশ ধকল যায়। ফলে ফুসফুসেরও ব্যায়াম করা হয়ে যায় এবং ক্রমে তার বায়ু ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি অন্যতম কার্যকর ‘কার্ডিও এক্সারসাইজ’।

ভিটামিন ডি: ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন আছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ভিটামিন ডি যোগ করায় রোগীরা উপকার পেয়েছেন এবং দীর্ঘ সময় শরীরচর্চা করতে পেরেছেন, দাবি চিকিৎসকদের। ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে পারেন সূর্যের আলো থেকে কিংবা নিতে পারে ‘সাপ্লিমেন্ট’। মাছ, ডিম, মাংস ইত্যাদি ভোজ্য উৎস থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশ কার্যকর। ‘ডায়াফ্রাগম্যাটিক ব্রিদিং’, ‘পার্সড লিপস ব্রিদিং’, প্রনয়ম ইত্যাদি কার্যকর এবং পরিচিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক এই ব্যায়ামগুলো অনুশীলন করতে ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা বাড়বে এবং ফুসফুস স্বাস্থ্যবান থাকবে।

ফুসফুস স্বাস্থ্যকর রাখতে,এই উপায়গুলো হয়ত ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা বাড়াবে। তবে প্রতিষেধনের চাইতে প্রতিরোধ সবসময় ভালো। তাই ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণগুলো দুর করতে হবে।
ধূমপান বর্জন করতে হবে। খাদ্যাভ্যাসে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ সমৃদ্ধ খাবারের মাত্রা বাড়াতে হবে। ঘরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। বাইরের দূষণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে।

দম বাড়ানোর কৌশল

দৌড় শুরুর আগে ওয়ার্ম আপ করে নিন - শুরুতেই দৌড়নো শুরু না করে, তার আগে শরীর একটু গরম করে নিলে পেশি ও টিস্যুতে রক্ত চলাচল সচল থাকে। এর জন্য দৌড়তে যাওয়ার আগে অল্প ব্যায়াম করে নিলে ভালো।

মাঝে বিরতি নিন- দৌড়ে খুব হাঁপিয়ে গেলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট বিরতি নেওয়া ভালো। এতে দৌড়ের জন্য যে স্ট্রেস তৈরি হয়, সেটা কমে যায়। পাশাপাশি আবারও শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদি কেউ বিরতি নিতে না চান, তা হলে তিনি গতি কমাতে পারেন। দৌড়ের গতি কমালেও হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম - শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত ব্যায়াম শর্টনেস অফ ব্রেথ অর্থাৎ হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমায়। এর ফলে ফুসফুস ও হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সব চেয়ে সোজা হল, নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া, তার পর ১০ সেকেন্ড থেমে গিয়ে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দেওয়া। এই ব্যায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে সহজেই হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ-মাথায় রাখতে হবে, যদি একটুতেই হাঁপিয়ে যাওয়া বা বার বার এই সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে তা ফুসফুস বা হার্টের কোনও সমস্যার জন্য হতে পারে। যা বুঝতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া শরীরে আয়রনের ঘাটতি, অ্যানিমিয়া ও অন্যান্য মেডিকেল ইস্যুর জন্যও শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। তাই এমন হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

শেষ কথা

দৌড়াতে গিয়ে আমাদের বেশিরভাগ কিশোর যুবকদেরই অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যাটি রয়েছে। যদি এটা কোন অসুখের কারণে না হয় তাহলে দম বাড়ানোর কৌশল গুলো ভালোভাবে মেনে চললে আশা করি এই সমস্যাগুলো আর হবে না আর যদি অসুস্থতার কারণে ফুসফুসে কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অতিসত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তথ্যগুলো ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url