জনপ্রিয়তার শীর্ষে নাটোরের কাঁচাগোল্লা
প্রিয় পাঠকগণ আজকে আপনাদের জানাবো মিষ্টান্ন খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে চাহিদা পূর্ণ যেই খাবার কাঁচাগোল্লা সম্পর্কে ,এই কাঁচা গোল্লা কেন এত জনপ্রিয় এর উত্থান কিভাবে কোথায় এটা প্রথম তৈরি হয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েব সাইটে ।
- কাঁচা গোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস
- কাঁচা গোল্লা নামকরণের ইতিহাস
- দেশ ও বিদেশে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল
- কাঁচা গোল্লা তৈরির উপকরণ এবং প্রস্তুত প্রণালী
- কাঁচা গোল্লার দাম
- শেষের কথাগুলো
কাঁচা গোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস
কাঁচা গোল্লা নামটা শুনলেই জিভে জল চলে আসে আসলে জিভে জল আসার মতনই এই মিষ্টান্ন যা ভুলক্রমে তৈরি করেছিলেন এর কারিগর কিছুটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে না যে ভুল করে বানানো এই মিষ্টান্ন নয় শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে প্রায় জনপ্রিয় লাভ করেছে এই কাঁচা গোল্লা সৃষ্টির চমৎকার এক কাহিনী রয়েছে লোকমুখি জানা যায় নিতান্ত পড়ে নাকি তৈরি করা হয়েছিল এই কাঁচাগোল্লা । তৎকালীন নাটোর শহরের লাল বাজারে মধুসূদন নামের মিষ্টির দোকানদার ছিল ওই সময়টাতে চমচম কালো জাম পান্তুয়া প্রভৃতি রকম মিষ্টির তৈরি করতে তার দোকানে কাজ করতো ১০ থেকে ১৫ জন কর্মচারী কারিগর হঠাৎ একদিন তার দোকানে কারিগর আসেনি তার অনেক দুধের ছানা তৈরি করা আছে সেগুলো তো নষ্ট হবে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ সে ছানাগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চিনির রস ঢেলে জাল দিয়ে ছানাগুলো নামিয়ে রাখতে বলেনতারপর এটি মুখে দিয়ে দেখেন খেতে খুব সুস্বাদু হয়েছে । যা পরবর্তীতে কাঁচাগোল্লা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কাঁচা গোল্লা নামকরণের ইতিহাস
সুস্বাদু এই মিষ্টি খেতে প্রচুর লোক আসতো, তো নতুনএই মিষ্টির নাম কি রাখা যায় সেই নিয়ে পড়ে গেলেন ভাবনায়। যেহেতু তার চিনির রসে ডুবানোর পূর্বে ছানাকে কিছুই করতে হয়নি অর্থাৎ ছানা ছিল কাঁচা সে শুধু রসে ডুবানো হয়েছে বা ঢালা হয়েছে তাই এ মিষ্টির নাম রাখা হয় কাঁচা গোল্লা ।এই কাঁচা গোল্লার স্বাদ পান্তুয়া, রসগোল্লা ,সন্দেশকেও হার মানিয়ে দেয় ধীরে ধীরে এই কাঁচা গোল্লার চাহিদা বাড়তে লাগলো ।মিষ্টি প্রেমীরা কাঁচাগোল্লা অনেক পছন্দ করলো কাঁচাগোল্লা সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল , প্রতিদিন কাঁচা গোল্লার চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়তে লাগলো , চাহিদার প্রেক্ষিতে মধুসূদন প্রতিদিন তিন মন ছানার কাঁচাগোলা তৈরি করতে লাগলেন সে সময় ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচা গোল্লার জনপ্রিয়তার কথা ।
আরো পড়ুন ঃমানসিক চাপ কমাতে ইসলামের ১০ টি নির্দেশনা
দেশ ও বিদেশে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল
1760 সালে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীলা শাসনকর্তা রানী ভবানী রাজত্বকালে কাঁচা গোল্লার উত্থান এবং এর শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে ।সেই সময় নাটোরের মিষ্টির দোকান ছিল খুবই কম সন্দেশ, পান্তুয়া,সহ নানা রকম মিষ্টি তৈরি করা হতো তার মধ্যে এই কাঁচা গোল্লা উঠে আসে সবার শীর্ষে তৎকালীন জমিদারের বাড়িতে বেশিরভাগ কাঁচা গোল্লা মিষ্টি মুখ করাতে ব্যবহৃত হতো ।তৎকালীন সময় ভারতের সর্বোচ্চ পত্রিকায় এবং রাজশাহীর পত্রিকাটিতে কাঁচা গোল্লার কথা বলা হয়েছে । কলকাতা এবং নাটোর শহর একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই দুই শহরের ঘনিষ্ঠ সর্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকায় নাটোরে কাঁচা গোল্লার কথা ভারত, ইংল্যান্ড সহ তৎকালীন বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছাকাছে আন্তর্জাতিকতা লাভ করে।
কাঁচা গোল্লা তৈরির উপকরণ এবং প্রস্তুত প্রণালী
কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে ছানা, এলাচ গুঁড়ো ,চিনি, মাওয়া (মাওয়ার জন্য দুধ ঘি পানি )উপকরণগুলো প্রয়োজন। কাঁচা গোল্লা তৈরি হয় দুইটি ধাপেঃ
১.দুধ থেকে ছানা তৈরি ঃ
প্রথম ধাপে দুধ ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে কড়াইতে করে জাল দিতে হবে। দুধ ও পানির মিশ্রণ ফুটতে থাকলে ভালোভাবে বড় চামচ দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে। পাঁচ থেকে ছয় মিনিট পর অল্প অল্প করে সিরকা মেশাতে হবে। দুধ জমাট বাঁধতে শুরু করলে ও যখন হালকা নরম হয় তখন সবুজ রঙের পানি আলাদা হবে তখন পাত্রটি নামাতে হবে । ছানার ভালোভাবে পানি নিঙরিয়ে একটি সিল্কের কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে একসময় কাপড় পেঁচিয়ে চাপ দিয়ে পানি বের করে নিতে হবে হাতের চাপ প্রয়োগ করে মিহিছানা তৈরি করতে হবে।
আরো পড়ুন ঃ সিলেট কি জন্য বিখ্যাত
২.ছানা থেকে কাচা গোল্লা তৈরি ঃ
দ্বিতীয় ধাপে ছানা তিন ভাগে ভাগ করতে হবে, প্রথমে দুই ভাগ একটি পাত্রে মাঝারি আঁচে জাল দিতে হবে। ছানার পানি বের হয়ে আসলে হালকা নরম মৃদু আঁচে অল্প চিনি দিয়ে জাল দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে চিনি মিশ্রিত ছানা আঠালো ভাব নিলে বাকি এক ভাগ ছানা মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে এর সঙ্গে ক্রিম এবং এলাচের গুঁড়া মিশিয়ে জাল দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে হালকা গরম থাকতেই মসৃণ করে ছেঁকে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু কাঁচা গোল্লা ,এরপর ওই তৈরিকৃত মিষ্টান্ন কে গুড়ো গুড়ো অবস্থায় কাঁচা গোল্লা হিসেবে বিক্রি করে থাকে।
কাঁচা গোল্লার দাম
বর্তমানে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান এমনকি কলকাতাতেও নাটোর থেকে যাওয়ার সময় কাঁচা গোল্লা নিয়ে যেতে কেউ ভুল করেন না। কাঁচা গোল্লার বর্তমান মূল্য বিভিন্ন মিষ্টির দোকান বেঁধে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। জনশ্রুতি আছে ১৮৪০ সালে দীঘা প্রতিয়ার রাজা প্রসন্ন নাথ রায়ের সময়কালে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন উৎসবের দিনে উপস্থিত ধর্ম পরায়ন সকলকেই এক বেলচা করে কাঁচা গোল্লা বিতরণ করা হতো। সে সময় কাচা গোল্লার মূল্য ছিল কেজি প্রতি ৩ আনা করে ।
শেষের কথাগুলো
এতক্ষণ বলে জানতে পারলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মিষ্টান্ন কাঁচা গোল্লা সম্পর্কে। লোভনীয় এই কাঁচা গোল্লার অরিজিনাল স্বাদ পেতে আপনাকে অবশ্যই নাটোর শহরে আসতে হবে যদি আসতে নাও পারেন তাহলে চিন্তা কিসের উপরে দেখানো উপকরণ সমূহ দিয়ে এবং যথা নিয়ম অনুযায়ী বাসায় বসেই তৈরি করতে পারবেন আপনার পছন্দের স্বাদের কাঁচাগোল্লা।
আরো পড়ুনঃ ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url