মাথা ব্যথার কারণ ও এর প্রতিকারগুলো

 মাথাব্যথা প্রধানত টেনশন এর কারণেই হয়ে থাকে আমরা মানুষ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান ধরনের চিন্তা ভাবনা আমাদের মাথায় ভর করে। এই ভর আমাদের মাথার চাপের ফলে মাথা ব্যথা অনুভব হয় চলুন জেনে নেয়া যাক এর প্রধান কারণ গুলো এবং এর প্রতিকার সমূহ যা আপনাকে দৈনন্দিন জীবনে সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করবে। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ

টেনশন ও চোখের সমস্যা

মাথার পিছনের দিকে হয় টেনশন হেডেক। এক্ষেত্রে ঘাড়ের সামান্য উপরে ব্যথা করে। প্রথমে মাথার এই অংশটি ভারী হয়ে যায়। তারপর ব্যথা হতে শুরু করে। কাঁধ এবং গলা শক্ত হয়ে যাওয়াও এই সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। আবার অনেকসময় এই টেনশন হেডেক কপালে শুরু হয়। সেক্ষেত্রে চোখেও এই সমস্যা শুরু হয়।

চোখের সমস্যা হলে সেই উপসর্গ কেবল চোখেই আটকে থাকে না। চোখের পাশাপাশি মাথা ব্যথাও হতে পারে অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে মাথার সামনের দিকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে কপালে ব্যথা হয়। একটু রেস্ট নিলে করলে এই ব্যথা কমে যায়।

সাইনাস ও মাইগ্রেন

সাইনাস হলো মাথার ভিতর থাকা ছোট ছোট বায়ুভর্তি কুঠুরি। এই বায়ু ভর্তি কুঠুরি মাথা হালকা রাখতে সাহায্য করে। তবে কোনও সংক্রমণের কারণে মাথার ভিতরের এই অংশে তৈরি হয় সমস্যা। সেক্ষেত্রে এই কুঠুরিতে প্রদাহ তৈরি হয়। তখন তীব্র মাথা ব্যথা হয়ে থাকে।

মাইগ্রেনের ব্যথা মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশে হতে পারে। আবার সেই ব্যথা মাথা ছাড়িয়ে চোখেও চলে আসতে পারে। তবে এই ব্যথা মানুষ ভেদে আলাদা হয়। এবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইগ্রেনের ব্যথার পিছনে কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আলো, শব্দ, গন্ধ সহ বিভিন্ন কারণে মাথায় এমন ব্যথা হয়।মাইগ্রেনভেস্টিবুলার মাইগ্রেন- এক ধরনের মাইগ্রেন যা ভার্টিগোর সাথে যুক্ত (মাথার ঘূর্ণায়মান সংবেদন)ক্লাস্টার মাথাব্যথা- মাথার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা, চোখ এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া সহ একটি বারবার, হঠাৎ মাথাব্যথা। এটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃ  প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

কিভাবে একটি মাথা ব্যাথা নির্ণয় করা হয়

যেহেতু মাথাব্যথা অনেক রোগের অন্তর্নিহিত কারণ হতে পারে, তাই যদি নিয়মিত ওষুধের মাধ্যমে ব্যথা কমে না বা ওষুধ খাওয়ার পরেও উপসর্গের উন্নতি না হয় তাহলে অনুগ্রহ করে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রভাবিত এলাকার অবস্থানের উপর নির্ভর করে, চিকিত্সক এই অবস্থাটি নির্ণয় করতে পারেন:

পারিবারিক ইতিহাস পরীক্ষা

শারীরিক পরীক্ষা

পরীক্ষা (প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে)

  •  রক্ত
  • ইমেজিং পরীক্ষা
  • এক্স রে
  •  ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI)
  •  কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান
  • প্রয়োজনে মতামতের জন্য রোগীকে ENT, নিউরোলজিস্ট ইত্যাদি বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা যেতে পারে।

মাথা ব্যথার প্রতিকার

মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল ইত্যাদি সেবন করা যেতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে অবশ্যই পেপটিক আলসাররোধী ওষুধ খেতে হবে। অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনেও মাথাব্যথা হতে পারে। এ সমস্যাকে বলে মেডিসিন ওভার ইউজ হেডেক। তাই খুব প্রয়োজন না হলে ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়াই ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদি কিছু ওষুধ সেবনে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
মাথাব্যথা একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় আমরা এটিকে গুরুত্ব দিই না। কিছু মাথাব্যথা জটিল রোগের উপসর্গ। গুরুত্ব না দিলে এটি মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব মতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বয়স্ক লোক বছরে একবার মাথা ব্যথা অনুভব করে। এ নিয়ে মাথা ব্যথার কোনো কারণ নেই। শতকরা ৯০ভাগের বেশি মাথাব্যথা (benign) জটিলতাহীন বা ক্ষতিকর নয়।


মাথাব্যথার দূরীকরণে দোয়া সমূহ

মাথাব্যথা অনেক যন্ত্রণাদায়ক রোগ। মাথাব্যথার কারণে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারে না। অনেকেই মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেক ওষুধ খেয়ে থাকেন।
তবে মাঝে মধ্যে মাথাব্যথা শুরু হলেও হাতের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না।
সেক্ষেত্রে কোরআনে রয়েছে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া।

মাথাব্যথার দোয়া
সুরা ওয়াকিয়ার ১৯ নম্বর আয়াতঃ

لَا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ
বাংলা উচ্চারণ- লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইউনযাফুন।
বাংলা অর্থঃ
যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না। (সুরা: ওয়াক্বিয়া, আয়াত: ৫৬)

এ ছাড়া উনিশবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতায়ানির রাজিম পড়া। এবং বিশতম বার ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়বে।

তিন বার এই দোয়া পড়তে হবে

اعوذ بكلمات الله التامات من شر ما أعاني وأجد و أحاذر

বাংলা উচ্চারণ : আউজু বিকালিমা তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা তুআনি ওয়া তাজিদু ওয়া তুহাজিরু।

বাংলা অর্থ : যে কষ্ট আমি ভোগ করছি এবং যে অনিষ্টে আক্রান্ত হয়েছি, আল্লাহ তাআলার পূর্ণাঙ্গ বাক্যের মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।

শেষ কথা

খুব পরিচিত দুটি কারণ হলো মাইগ্রেন আর টেনশন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই টেনশন টাইপ হেডেক। ১১ শতাংশের জন্য দায়ী মাইগ্রেন। অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, চা-কফি পান, অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক, মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকলে, যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথা ব্যথার কারণ। তাই এসব অভ্যাস বা অসুবিধা পরিবর্তন বা সমাধান করলে মাথা ব্যথা অনেকাংশে কমে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url