রাজশাহী অঞ্চলের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ (প্রথম পর্ব )

 বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষা- শিল্প- সাহিত্য- সংস্কৃতি,সমাজসেবা- রাজনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রতিভাবান ও নিবেদিতপ্রাণ লোকান্তরিত মানুষ স্ব স্ব অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন৷ যাদের সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।প্রিয় পাঠক  গন, নিবেদিতপ্রাণ এসব বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে আলোকপাত করতেই আমাদের এ আয়োজন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

  • মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা
  • আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান
  • বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
  • মাদার বখশ
  • গোলাম আরিফ টিপু
  • এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন

মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা

মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা ১ মে, ১৯৩৪ সালে বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন। শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময়ও তিনি প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। 

আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। নাটোর জেলার অন্তর্গত বাগাতিপাড়ার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে ১৯২৩ সালের ২৬ জুন তারিখে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তিনি বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে ঐ সময় কামারুজ্জামানসহ আরো তিন নেতাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়। ঐ বছরেরই ৩ নভেম্বর ভোর সাড়ে চারটায় কারাগারের অভ্যন্তরে তাঁকেসহ আরো তিন জাতীয় নেতাকে সেনা সদস্যরা নির্মমভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ঐ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে “জেল হত্যা দিবস” নামে কুখ্যাত হয়ে আছে।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একজন অসামান্য মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ৭ মার্চ ১৯৪৯ সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে তাঁর জন্ম। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। তিনি মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মহানন্দা নদীর তীরে শত্রুর প্রতিরক্ষা ভাঙ্গার প্রচেষ্টার সময় তিনি শহীদ হন। তাঁর উদ্যোগে মুক্তিবাহিনী ঐ অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। যার ফলাফলস্বরূপ মুক্তিবাহিনী প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে এবং ওই অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করে। তাঁর সম্মানে ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটক “বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট” নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। অসংখ্য স্বাধীনতা প্রেমিক জনগণ, ভক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, অগণিত মা-বোনের নয়ন জলের আশীর্বাদে সিক্ত করে তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়।

মাদার বখশ

মাদার বখশ একজন বাংলাদেশি রাজনীতিক ও ভাষাসৈনিক। তিনি ১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাজশাহীর নাটোর মহকুমার (বর্তমান নাটোর জেলার) সিংড়া উপজেলার স্থাপনদীঘি নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে রাজশাহীর (আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা) এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন৷ দেশ বিভাজনের পর ১৯৪৭-৫৪ পর্যন্ত পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি ১৯৫০-৫৪ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।


গোলাম আরিফ টিপু

গোলাম আরিফ টিপু ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা আন্দোলন কর্মী। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলন মূলত তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করে।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও জাহানারা বেগম এর ছেলে। ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য হন। ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন । ২০০৮ সালে তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালের ৯ মে পর্যন্ত মেয়র ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট পুনরায় মেয়র পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি প্রেসিডিয়াম এর সদস্য হিসেবে অন্তৰ্ভুক্ত হন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url