আমের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা

 ভোজন রসিকদের জন্য আম একটি রসালো সুস্বাদু খাবার। তাছাড়া কম-বেশি সকলেই আম খেতে বেশ ভালোবাসে। সকল ফলের রাজা হিসেবে আমের নাম বেশ পরিচিত। শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় এতে অনেক পুষ্টি এবং শরীরের জন্য নানা উপকারিতা বিরাজমান। আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, রানি পছন্দসহ আরও কত রকমের আমে বাজার সয়লাব। চাইলেই খেতে পারেন মজাদার এই আমগুলো। আম খাওয়ার উপকারিতাও অনেক। চলুন আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ

ক্যানসার প্রতিরোধে আম

আমে আছে নানা রকম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কোয়েরসেটিন, ফাইসেটিন, আইসোকোয়েরসেটিন, অ্যাস্ট্রাগ্যালিন, গ্যালিক অ্যাসিড, মিথাইল গ্যালেট ইত্যাদি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো স্তন ক্যানসার থেকে শুরু করে কোলন ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসর ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই ক্যানসার প্রতিরোধে খেতে পারেন আম।

ত্বকের জন্য উপকারী

ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আম। বিশেষ করে ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এটি।আমে আছে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। আছে সাইট্রিক অ্যাসিডও। শরীরের অ্যালকালি নামের রাসায়নিকের ভারসাম্য ঠিক রাখে এটি।আমে থাকা ভিটামিন আমাদের রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া যারা ড্রাই আই সমস্যায় ভুগছেন, তারা আম খেয়ে উপকার পেতে পারেন।বডি স্ক্রাব হিসেবে পাকা আম বেশ ভালো কাজ করে। আমের পেস্ট তৈরি করে তাতে একটুখানি মধু আর দুধ মিশিয়ে নিন। আলতো করে ম্যাসাজ করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।


রোগ-প্রতিরোধে আম

আমে আছে আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যারোটেনয়েড। এটা আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।এই গরমে হিট স্ট্রোক সাধারণ ঘটনা। আম আমাদের ভেতরটা শীতল রাখে ও শরীরকে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।ভিটামিন সি, ফাইবার ও প্যাকটিন থাকায় রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে রসাল আম।আমে আছে বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান। তাই একটি আম খেলেই সারা দিনের ভিটামিনের চাহিদা মিটে যায়। আবার এতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। তাই ওজন কমাতে আম খেতে পারেন।অরুভিদিক মতবাদ অনুসারে আমের পাঁচটি অংশ ব্যবহার করা হয়। লিউকোরিয়া, রক্তাক্ত পাইলস এবং ফুসফুস বা অন্ত্র থেকে রক্তপাতের উপর এই গাছের আস্তরণ দেওয়া হয়। ছাল, মূল ও পাতা কষাক, প্রদাহরোধক, বাত, পিত্ত ও কফ নাশক। বিচ্ছুর কামড় এবং কিছু কিছু গলা ব্যথা এবং হেঁচকিতে এর ধোঁয়ায় পাতা উপকারী। ফুলের গুঁড়া বা ক্বাথ আতিসার এবং স্প্যানিয়ার্ডে কার্যকর বলে বলা হয়।


আমের ফুল ঠাণ্ডা, বাগ্মিতারোধী, অগ্নি নিবারক, উপকারী এবং কফ, পিত্ত, খিঁচুনি, শ্বেতরোগ ও উদরাময় নাশক। কাঁচা ফল কথিত, টক, বাত পিত্ত প্ররোচিত, অন্ত্রকে সংকুচিত করে, ঘা রোগ দূর করে এবং ডায়রিয়া, মূত্রাশয় এবং যোনি প্রদাহে উপকারী। পাকা ফল মিষ্টি, বীর্য-বর্ধক, কামোদ্দীপক, ঠাণ্ডা, প্রদাহরোধী ও আলসার, শ্লেষ্মা ও রক্তের রোগ দূর করে। এটি শ্বাসকষ্ট, অম্লতা, হেপাটিক বৃদ্ধি এবং ক্ষয়েও উপকারী। আম এমনই বহু গুণের ভান্ডার, তাই একে ফলের রাজা বলা হয়।

হজমে সহায়ক

স্বাস্থ্য ধরে রাখতে হজম প্রক্রিয়া সুস্থ থাকা জরুরি। আমে থাকা এনজাইমগুলো প্রোটিন উপাদান সহজে ভেঙে ফেলতে পারে। এতে খাবার হজম হয় দ্রুত, বাঁচা যায় পাকস্থলী সংক্রান্ত অনেক রোগ থেকেও।আম আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজ করে। তাই যারা লেখাপড়া করছেন, তারা বেশি বেশি করে আম খেতে পারেন। তাছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, আম খেলে হৃদয়ে ভালোবাসার জন্ম হয়। তাই এটাকে উন্নত বিশ্বে লাভ ফ্রুট বলে। সুতরাং মৌসুম থাকতেই প্রিয়জনকে বেশি বেশি আম উপহার দিন।

আমের স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • মানুষ স্থূলতা কমাতে কঠোর পরিশ্রম করে, তবুও তাদের ওজন কমে না। তবে আম খেলে স্থূলতা কমানো যায় সহজেই।
  • অনেক ডায়েটিশিয়ানও আমকে ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
  • আমের রহস্য লুকিয়ে আছে এর গুঁড়িতে। আমের কার্নেলে দ্রবণীয় ফাইবার এবং চর্বি থাকে।
  • আমের গুঁড়িতে উপস্থিত ফাইবার এবং চর্বি শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে খুবই সহায়ক।
  • আম খেলে ক্ষুধা কমে যায় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন হয়। আমে লেপটিন নামক রাসায়নিক থাকে যা ক্ষুধা কমায়।
  • কম কোলেস্টেরল আমে পাওয়া যায়। এতে পাওয়া এডিপোনেক্টিন কোলেস্টেরল কমায় এবং ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়ায়, যার ফলে অতিরিক্ত চর্বি আপনা-আপনি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
  • আম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।


  • হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে- কাঁচা আম খেলে আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
  • ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী – কাঁচা আম আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় বলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং ত্বক নরম, কোমল ও দাগমুক্ত হতে শুরু করে।
  • শরীরে পানির অভাব পূরণ করে- আম খেলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পূরণ হয়। শরীর পানিশূন্য হয় না এবং এই গ্রীষ্মের মৌসুমে আমাদের শরীর সানস্ট্রোকের সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। কাঁচা আমের জমে থাকা শরীরেও শীতলতা নিয়ে আসে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালো- আমের খাবার আমাদের চোখের জন্যও সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। আমে অতিরিক্ত ভিটামিন এ খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং চোখের সমস্যা দূর করতে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

শেষ কথাগুলো

আমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (স্যাচুরেটেড ফ্যাট), কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম খুবই কম। এছাড়াও, এটি খাদ্যতালিকাগত আঁশ, ভিটামিন B-6, ভিটামিন A, এবং ভিটামিন C-এর একটি ভাল উত্‍স হিসাবে বিবেচিত হয়। আম খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি খুব পাতলা হন এবং ওজন বাড়াতে চান, তাহলে আম খান কারণ এটি ওজন বাড়ায়। নিয়মমাফিক আম খেলে উপরিক্ত উপকারগুলো শরীরে পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url