মিষ্টি কুমড়ার বীজের পুষ্টি গুণ ও উপকারিতা
মহান রব যা সৃষ্টি করেছেন, তার কোনটাই ফেলনা নয়। সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়া জনপ্রিয়। তার শাক পুষ্টিকর, সুস্বাদু। তার বীজ খুবই উপকারী। এই বীজ আমরা খাওয়ার অযোগ্য ভেবে ফেলে দিই। তবে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়ার বীজ হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উৎস। চলুন কুমড়ার বীজের বিভিন্ন পুষ্টি ও গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
- পুষ্টিগুণ
- প্রোস্ট্রেট প্রন্থির টিউমার
- ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
- কতটুকু ও কীভাবে খাবেন
- উপকারিতা
- প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে
- রক্ত শূণ্যতা দূর করতে
- শেষ কথা
পুষ্টিগুণ
মিষ্টি কুমড়ার বীজ উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। কোনো কোলেস্টেরল নেই বলে এটি একটি নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। এই বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস কপার,ভিটামিন ই, আয়রন ও ফাইবার।প্রতি ৩৪.৫০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়া বীজে আছে: শক্তি- ১৮৬.৬৫ ক্যালরী, ম্যাঙ্গানিজ ১.০৪ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম- ১৮৪.৫৮ মিঃগ্রাম, ফসফরাস ৪০৫.০৩ মিঃগ্রাম, ট্রিপটোফেন ১১০ মিঃগ্রাম, আয়রন ৫.১৬ মিঃগ্রাম, কপ্ওা ০.৪৮ মিঃগ্রাম, ভিটামিন কে ১৭.৭৩ মিঃগ্রাম, জিংক ২.৫৭ মিঃগ্রাম, প্রোটিন ৮.৮৭ ও অন্যান্য।মিষ্টি কুমড়া বীজের ৩০ শতাংশই ফ্যাটি এসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। ১০০ গ্রাম কুমড়ার বীজ থেকে ৫৬০ ক্যালরি পাওয়া যায়, তার মানে ক্ষুধা মেটানোর কাজটাও সে ভালো ভাবেই সমাধা করতে পারে।
প্রোস্ট্রেট প্রন্থির টিউমার
বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপা ট্রোফি বা বিপিএইচ, যা সহজ বাংলায় প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নামে পরিচিত। এ রোগের ফলে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। টেস্টোস্টেরন হরমোন ও এর থেকে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির কোষসমূহকে অতি উদ্দীপিত করে। ফলে দ্রুত নতুন নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পেয়ে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার সৃষ্টি হয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজ থেকে উৎপন্ন তেল প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক ও ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। যা প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণ করে।
আরো পড়ুনঃ আমের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ পদার্থ। যা শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড উৎপাদনে অপরিহার্য। এছাড়া শরীরের হরমোনসমূহের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, হার্ট সচল, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় মজবুত, স্নায়ুতন্ত্রের খবরাখবর আদান-প্রদান সমূহ অসংখ্য জৈবিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ম্যাগনেসিয়ামের খুব সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য উপাদান হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। প্রতিদিন ৭০ গ্রাাম বীজ দেহের চাহিদার পুরো অংশই পূরণ করতে পারে।
কতটুকু ও কীভাবে খাবেন
মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে এবং এগুলো প্রোটিন সমৃদ্ধ। তাই পরিমিত পরিমাণে কুমড়ার বীজ খাওয়া উপকারী। একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত একমুঠো অর্থাৎ ১৫-২০টির মতো বীজ খেতে পারবেন। মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। সালাদ, তরকারির মধ্যে বীজ যোগ করলে খাবারের পুষ্টিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া সকাল এবং বিকালের নাস্তায় এ বীজ ড্রাই ফুড হিসেবে অথবা অল্প তেলে হালকা ভেজে খাওয়া যায়।কাঁচা খেতে পারেন কিংবা একটু টেলে নিয়েও খাওয়া যায়। কুমড়ার বীজ দিয়ে কেক, স্যুপ ও সালাদ বানিয়েও খেয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তা বানানোর আগে বেটে নিতে হবে। এছাড়া রোদে রেখে শুকিয়ে খেলেও উপকার পেতে পারেন।
উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে ভিটামিন ই, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। ইমিউনিটি ভালো থাকলে যেকোনো রোগ সহজে প্রতিরোধ করা যায়।কুমড়োর বীজের ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। এই বীজের ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডও কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।এই বীজে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় এটি বোন ডেনসিটি বৃদ্ধি করে হাড়কে মজবুত করে।কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কুমড়ার বীজ খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। আরেক গবেষণা বলছে, কুমড়ার বীজ উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও কার্যকরী। এটি তাই শরীরের নানা কাজে লাগতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url