মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা

 মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে এটি পছন্দ করেন না। মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণও খুব উচ্চ পর্যায়ে বিদ্যমান। ছোট বড় সকলেই খেতে পারেন এটি। চলুন আজ জেনে নিই মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ও কয়েকটি উপকারিতার কথা। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ

রোগ প্রতিরোধ করে

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মিষ্টি কুমড়া একটি অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন এই খাবারটি খেলে রোগ ব্যাধির সংক্রমণ কমে যায়। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ই মানবদেহে ক্যানসার ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।মিখাইলজিক বলেন, “পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে কুমড়া হৃদ-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে রক্তচাপ কমাতে বা স্বাভাবিক রাখতে পটাসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।এক কাপ কুমড়া থেকে প্রায় ৫০০ মাইক্রোগ্রাম পটাসিয়াম পাওয়া যায়। আর সাধারণভাবে দেহে পটাসিয়ামের দৈনিক চাহিদা হল ৪,৭০০ মাইক্রোগ্রামস।স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ, স্বাভাবিক হৃদগতি ও পেশির কার্যকারিতার জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজন।

পুষ্টি গুণ

একটি টিনজাত কুমড়া থেকে মিলবে- ৮৩ ক্যাললি, ০.৭ গ্রাম চর্বি, ২.৭ গ্রাম প্রোটিন, ১৯.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস, ৭ গ্রাম আঁশ, ৮ গ্রাম চিনি।আর এক কাপ চৌক করে কাটা কুমড়া থেকে পাওয়া যায়- ১২৬ ক্যাললি, ০ গ্রাম চর্বি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ৭.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস, ০.৫ গ্রাম আঁশ, ৩ গ্রাম চিনি।এছাড়াও রয়েছে উচ্চ মাত্রায় নানান রকম ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। তাই এই মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি হতে পারে পুষ্টিকর খাবার।

আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি ও রক্ষণাবেক্ষণ

চোখ ভালো রাখতে 

মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বা বিটাক্যারোটিন রয়েছে। যেটি চোখের জন্য খুবই ভালো। আমাদের চোখের রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু চোখের অসুখ নয়, ভিটামিন এ এর অভাবজনিত অন্যান্য রোগেও মিষ্টি কুমড়া উপকারী। তাই চোখ সুস্থ ও সচল রাখতে খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া রাখতে পারেন।মিখাইলজিক বলেন, “এই উদ্ভিজ্জ উপাদান দেহে পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ’তে রূপ নেয়। আর এই ভিটামিন যে চোখের জন্য উপকারী সেটা প্রায় সবারই জানা।এছাড়া লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন মিলবে এই সবজি থেকে। এই দুই উপাদান বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তি কমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

ত্বক উজ্বল করে

মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্বল করতেও সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ ও সি চুল এবং ত্বক ভালো রাখে। নিয়মিত এই সবজি খেলে উজ্জ্বল চুল ও চকচকে ত্বকের জন্য উপকারী। তা ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।মিখাইলজিক আরও বলেন, “বেটা-ক্যারোটিন পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ’তে রূপ নিয়ে অতিবেগুনি রশ্মির কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি পোষাতে পারে। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ত্বক রাখে আর্দ্র। আর ভিটামিন ই- একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’ থেকে হওয়া ক্ষতি পূরণ করে।

খাদ্য হজমে সাহায্য করে

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার আছে যা সহজেই হজম হয়। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহে এই সবজির তুলনা হয় না।ছোট চিংড়ি দিয়ে কুমড়ার তরকারি কিংবা কুমড়া ভর্তা- যেভাবেই খাওয়া হোক, কমলা রংয়ের এই সবজিতে থাকা নানান উপাদান নানানভাবে দেহে উপকার করে।ই সবজিতে থাকা ‘প্রিবায়োটিক ফাইবার’ অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়ার জন্য উপকারী। ফলে হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিসেও উপকারী 

শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।যাদের হাই প্রেসার রয়েছে তারা নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন। কারণ মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। আর এটি আমাদের শরীরে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।এছাড়া খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে কমে নানান ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি। আর এসব উপাদানই মিলবে কুমড়া থেকে।

শেষ কথা

এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।বাজার থেকে কিনে আনা মিষ্টি কুমড়া কিংবা টিনজাত অবস্থায় পাওয়া এই সবজি থেকে মিলবে নানান পুষ্টি।ভিটামিন এ, সি এবং ই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। আর এসবই মিলবে কুমড়া থেকে- জানান শিকাগো ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ম্যাগি মিখাইলজিক। তাই আমাদের নিয়মিত শাকসবজির মত পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া খাওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url