রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ই মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক ও লেখক। তাঁর মাতা সারদা দেবী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ ও বিনয়ী নারী।রবীন্দ্রনাথের শৈশব ছিল সুখের ও সমৃদ্ধ। তিনি বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর দাদা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছিলেন একজন শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তি। তিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই বোন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩ জন ভাইবোন ছিল এবং তিনি ছিলেন চতুর্থ জীবিত পুত্র। তাঁর ১৩ জন ভাই ও বোনের নাম হল সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বর্ণকুমারী দেবী, পূণ্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌদামিনী ঠাকুর, বর্ণকুমারী ঠাকুর, শরৎকুমারী ঠাকুর, ভুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ঠাকুরদাদা ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন কবি এবং দার্শনিক। তাঁর দ্বিতীয় বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় এবং অ-ইউরোপীয় যিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের জন্য নির্বাচিত হন। তাঁর আরেক বড় ভাই জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার। স্বর্ণকুমারী নামে তাঁর একটি বোনও ছিল, যিনি ছিলেন একজন উপন্যাসিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ৯ বছর বয়সী কাদম্বরী দেবীর বিয়ে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাদম্বরী দেবীর বয়স প্রায় সমান ছিল। এই কারণেই তারা বেশিরভাগ সময় একসাথে কাটাতেন। বলা হয় কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমে পড়েছিলেন। তাই ১৮৮৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ের পর কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেছিলেন।
১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে মৃণালিনী দেবীকে (১৮৭৩–১৯০২) বিয়ে করেন।
মৃণালিনী দেবী ছিলেন ঠাকুর বাড়ির এক অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা “ভবতারিণী”। বিবাহের পর ভবতারিণীর নাম রাখা হয়েছিল “মৃণালিনী দেবী”। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর পাঁচ জন সন্তান ছিলেন। তারা হল – মাধুরীলতা, রথীন্দ্রনাথ, রেণুকা, মীরা এবং শমীন্দ্রনাথ। রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথ খুব অল্প বয়সে মারা যান। দুঃখজনক সময় ১৯০২ সালে তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবী এবং কিছুকাল পরে তার দুই সন্তান মারা যায়। ১৯০৫ সালে তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও মারা যান।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাজীবন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা জীবন প্রাথমিক শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বনামধন্য সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলথেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা একেবারেই পছন্দ করতেন না।
তাই তিনি প্রায়শই স্কুল থেকে পালিয়ে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা আজকের ব্যবস্থার চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। রবীন্দ্রনাথ বাড়িতে অনেক কিছু শিখেছিলেন, যেমন – কুস্তি, শিল্প, ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, সংস্কৃতি এবং ইংরেজি। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল তাঁর আরেক ভাই হরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর সন্তানদের ইংরেজি ও সঙ্গীত শেখার জন্য উৎসাহিত করতেন। তাই তাঁর বাবা বাড়িতে কয়েকজন সংগীতজ্ঞ নিয়োগ করেছিলেন। উচ্চ শিক্ষা ও বিদেশ সফর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে আইনজীবী হবে। এই কারণেই ১৮৭৮ সালে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংল্যান্ডের পূর্ব সাসেক্সের ব্রাইটনে একটি পাবলিক কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি আইন অধ্যয়নের জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষায় আগ্রহের অভাবের জন্য তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন এবং নিজের চেষ্টায় শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন কাজ শিখতে শুরু করেন। তিনি ইংরেজি, আইরিশ এবং স্কটিশ সাহিত্য ও সঙ্গীতের সারমর্মও শিখেছিলেন।
১৮৮০ সালে দেড় বছর পর তিনি কোনো ডিগ্রি ছাড়াই বাংলায় ফিরে আসেন। ভারতে এসে তিনি ১৮৮২ সালে দুটি শ্লোক নাটক প্রকাশ করেন, একটির নাম “রুদ্র চক্র” এবং অন্যটি “সন্ধ্যা সঙ্গীত” কবিতার সংকলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা চিন্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাকে শ্রেয় বলে মনে করতেন।
নোবেল বিজয়ী
১৯১৩ সালের নভেম্বরে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার, গীতাঞ্জলির জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। গীতাঞ্জলি একটি কবিতার সংকলন, যাতে মোট ১০৩ টি কবিতা রয়েছে। অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মান ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে “ডক্টর অফ লিটারেচার” ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯১৫ সালের ৩ জুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্রিটেন “নাইটহুড” উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি জালিয়ানওয়ালা হত্যাকাণ্ডের পরে এই উপাধি ত্যাগ করেছিলেন।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
জীবনের শেষ চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়।এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাকে।১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি।এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন।দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শেষ কথা
বাংলা সাহিত্য কবিতা উপন্যাস ইত্যাদি সব ধরনের রচয়িতা ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পড়াশোনা করতে জীবনে প্রথম থেকে পড়াশোনা শেষ পর্যন্ত তার রচয়িতা সকল কাব্যগ্রন্থ কবিতা উপন্যাস আমাদের পড়তে হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লেখক এর জীবনী সম্পর্কে যা আমাদের পড়াশোনায় জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তাই এ বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি রচনা করা হলো আশা করি আপনাদের অনেকের উপকারে আসবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url