নবাব সলিমুল্লাহ স্যারের জীবনী

 খাজা সলিমুল্লাহ বা নবাব সলিমুল্লাহ (৭ জুন ১৮৭১-১৬ জানুয়ারি ১৯১৫) ঢাকার চতুর্থ নবাব ছিলেন। তার পিতা নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ও পিতামহ নবাব খাজা আব্দুল গনি। তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।[২] যদিও তিনি জীবদ্দশায় এই বিশ্ববিদ্যালয় দেখে যেতে পারেননি।

পোস্ট সূচীপত্রঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে স্থানে অবস্থিত তার একটি বড় অংশের জমি নবাবের প্রদান করা। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে এটা নিশ্চিত যে পুরো জমি না হলেও একটি বড় অংশ নবাব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। 

বঙ্গভঙ্গ এবং খাজা সলিমুল্লাহ

১৯০৩ সালে বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকায় সফরে এলে নওয়াব সলিমুল্লাহ পূর্ব বাংলার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। ওদিকে আসামের উৎপাদিত চা ও অন্যান্য পণ্য বিদেশে রপ্তানীর ব্যাপারে পরিবহন ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে কলকাতার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের চিন্তা করে বৃটিশরা, এই সাথে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ভাবনাও চলতে থাকে। বৃটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নবাবের আবেদন যুক্ত হয়ে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলা বিভাজনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর প্রেক্ষিতে কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধজীবী ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৯০৫ সালে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠন করা হল। বঙ্গ ভঙ্গ নিয়ে বাঙ্গালী হিন্দুদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে ১৯১১ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ হয়ে যায়।

মুসলিম লীগ গঠন

১৮৭৭ সালে সৈয়দ আমীর আলীর উদ্যোগে 'সেন্ট্রাল মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন' গঠনের সাথে স্যার সৈয়দ আহমদ খান দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মুসলমানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করার পর হিন্দি এবং উর্দু'র বিরোধ সৃষ্টি হলে মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ সচেতন হয়ে উঠেন এবং ১৮৮৯ সালে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে 'ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিফেন্স এ্যাসোসিয়েশন' গঠন করেন। ১৮৯৩ সালে উত্তর ভারতে 'মোহমেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অরগানাইজেশন অব আপার ইন্ডিয়া' গঠিত হয়। ১৯০৩ সালে সাহরানপুরে মুসলিম রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঞ্জাবে 'নিখিল ভারত মুসলিম লীগ' নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। এদিকে বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ এবং মুসলিম বিদ্বেষের ঝড় বয়ে যাওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। তিনি সর্বভারতীয় পর্যায়ে মুসলিম ঐক্যের কথা ভাবতে শুরু করেন।

আরো পড়ুনঃ বেগম রোকেয়ার জীবনী

১৯০৬ সালের নভেম্বরে সলিমুল্লাহ সমগ্র ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের নিকট পত্রালাপে নিজের অভিপ্রায় তুলে ধরেন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘের প্রস্তাব রাখেন। ১৯০৬ সালের ২৮-৩০শে ডিসেম্বর সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন আহুত হয়। শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সমগ্র ভারতের প্রায় ৮ হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন। নবাব সলিমুল্লাহ 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সী' অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন; হাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কিছু প্রতিনিধি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন। কিছু প্রতিনিধির আপত্তির প্রেক্ষিতে কনফেডারেন্সী শব্দটি পরিত্যাগ করে লীগ শব্দটিকে গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ' বা নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ঢাকায় এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বঙ্গভঙ্গ সমর্থন এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নিন্দা করা হয়। এ সংগঠনের ব্যাপারে শুরু থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠী বিরূপ অবস্থান নেয়। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী সম্পাদিত দি বেঙ্গলি পত্রিকা নবগঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কে সলিমুল্লাহ লীগ হিসেবে অভিহিত করে।

পরিবার 

তিনি পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যার জনক। পুত্ররা হলেনঃ

  1. খাজা আহসানুল্লাহ
  2. খাজা হাবিবুল্লাহ
  3. খাজা আলিমুল্লাহ
  4.  খাজা হাফিযুল্লাহ
  5.  খাজা নাসরুল্লাহ

ঢাকার নবাব

রাজত্ব ১৯০১ - ১৯১৫

পূর্বসূরি খাজা আহসানউল্লাহ

উত্তরসূরি খাজা হাবিবুল্লাহ

নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও ১ম প্রেসিডেন্ট

পূর্বসূরি পদ সৃষ্টি

আরো পড়ুনঃ বেগমের কামালের আত্মজীবনী

উত্তরসূরি সুলতান মুহাম্মদ শাহ আগা খান

ব্যক্তিগত বিবরণ

জন্ম ৭ জুন ১৮৭১

আহসান মঞ্জিল, ঢাকা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত

মৃত্যু ১৬ জানুয়ারি ১৯১৫ (বয়স ৪৩)

চৌরঙ্গী, কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত

সমাধি বেগম বাজার, ঢাকা

নবাবের মৃত্যু

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র মৃত্যু প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ কবি ফারুক মাহমুদ বলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে বড়লাটের সঙ্গে নবাবের মতবিরোধ দেখা দেয় এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে বড়লাট নবাবকে অপমানজনক কথা বলেন। যা তার সহ্য হয়নি। নবাবের সঙ্গে সব সময় একটি ছড়ি থাকত। সে ছড়ি দিয়ে নবাব বড়লাটের টেবিলে আঘাত করেন। এ নিয়ে চরম বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে বড়লাটের ইঙ্গিতে তার দেহরক্ষী নবাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এবং গুরুতর আহত হন। পরে নবাবের মৃত্যু হয়। নিশ্ছিদ্র প্রহরায় নবাবের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। তার আত্মীয়স্বজনকেও মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। ১৯১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি সামরিক প্রহরায় বেগম বাজারে তাকে দাফন করা হয়। (সরকার শাহাবুদ্দিন আহমদ: আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল; প্রথম খণ্ড, পৃ. ২২১)। নি:সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং পুর্ববাংলার মানুষের জন্য তিনি অগ্রগন্য ভুমিকা পালন করেন। কিন্তু এই ইতিহাস সমুহ আমাদের কাছ থেকে লুক্কায়িত!

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ, এই পোস্ট  নবাব স্যার সলিমুল্লাহ তার বিস্তারিত  জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আশা করি এই তথ্যসমূহ আপনাদের অনেক কাজে আসবে। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন এবং আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানান। এরকম সুন্দর সুন্দর তথ্যবহুল পোস্ট পেতে এক্স ডিস্কক্রাইব এর সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url