এম আর আই মেশিন কি এর ব্যবহার ও সতর্কতা
MRI (Magnetic Resonance Imaging) বর্তমান যুগের একটি অসাধারণ ডায়াগনস্টিক টুল। এর মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশের নিঁখুত ছবি তোলা যায়। এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশের টিউমার, ক্ষত, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু, ভাংগা হাড় ইত্যাদি সনাক্ত করা যায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
এটি কিভাবে কাজ করে
মানবদেহের শতকরা ৭০% ভাগই পানি আর চর্বি। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন পরমাণু। সাধারণত এই পরমাণুগুলো লাটিমের মত তাদের নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্রে এদিক ওদিক ইতস্ততভাবে ঘুরতে থাকে।
যদি মানবদেহকে একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রে রাখা হয় তবে এই হাইড্রোজেন পরমাণুসমূহ্ জোড়ায় জোড়ায় এমনভাবে সজ্জিত হয় যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক পরমাণু চৌম্বকক্ষেত্রের উত্তর মেরুর দিকে এবং বাকী প্রায় অর্ধেক সংখ্যক চৌম্বকক্ষেত্রের দক্ষিণ মেরুর দিকে সজ্জিত হয়ে যায়।
কিন্তু কিছু হাইড্রোজেন পরমাণু বেজোড় থেকে যায় (চিত্রে সবুজ পরমাণুগুলো জোড় গঠন করতে পারেনি)। এমতাবস্থায় যদি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভ (বেতার কম্পাঙ্কের তরঙ্গ) পালস্ পাঠানো হয় তবে এই বেজোড় পরমাণুগুলো শক্তি গ্রহণ করে বর্তমান অবস্থান পরিবর্তন করে অপর দিকে ঘুরে যায়।
আরো পড়ুনঃ ইমোশনাল স্ট্যাটাস বাংলা ও ইংরেজি
অতঃপর যদি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি পালস বন্ধ করে দেয়া হয় তবে এই পরমাণুগুলো আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে এবং শক্তি নিঃসরণ করে। এই শক্তি কম্পিউটারে সংকেত পাঠায় এবং কম্পিউটার গাণিতিক সূত্র এবং এলগরিদমের সাহায্যে তা দিয়ে সুন্দর চিত্র গঠন করে।
এম,আর,আই মেশিনে যে রেডিও পালস পাঠানো হয় তার কমপাঙ্ক থাকে সাধারণত হাইড্রোজেনের নিজস্ব কম্পাঙ্কের সমান। ফলে হাইড্রোজেন পরমাণুতে অনুরণন (Resonance) সৃষ্টি হয়। এ কারণেই একে রেজোনেন্স ইমেজিং বলা হয়।
এই মেশিনে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরীর জন্য যে চুম্বক ব্যবহার করা হয় তার শক্তি সাধারণত ৫০০০ থেকে ২০০০০ গস (Guass) পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেখানে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মান মাত্র ০.৫ গস (Guass)। হাইড্রোজেন পরমাণুর ম্যাগনেটিক মোমেন্ট তথা চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতি সংবেদনশীলতা বেশি (কারণ এতে অযুগ্ম ইলেক্ট্রন থাকে) এবং মানবদেহে এদের সংখ্যা অসীম। তাই হাইড্রোজেনকেই বেছে নেয়া হয়।
ব্যবহারে সতর্কতা
এম আর আই মেশিনে প্রবেশের আগে কিছু সতর্কতা আছে যা মেনে চললে ভয়ের কিছু নেই। আবার না মানলে ঘটে যেতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ। প্রত্যক্ষতা অবলম্বন না করায় বিভিন্ন হসপিটালে এমআরআই মেশিনে দুর্ঘটনা নজির রয়েছে। এইতো বেশ কিছুদিন আগের কথা ভারতের রাজেশ নামক এক যুবক এমআরআই মেশিনে প্রবেশ করে নিজের প্রাণ হারান। কিভাবে রাজেশ প্রাণ হারিয়েছিলেন বিস্তারিত জেনে নিন।
ভারতে এক হাসপাতালে রাজেশ তার মাকে এম আর আই করতে নিয়ে আসে। ডাক্তার তাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে বলেন সে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে সিলিন্ডার নিয়ে এমআরআই মেশিন রুমে ঢুকে যায়। সিলিন্ডারে ধাত ব পদার্থ থাকায় এম আর আই মেশিনে চৌম্বক শক্তির কারণে সিলিন্ডারসহ রাজেশ এমআরআই মেশিনের ঢুকে যায়। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই এমআরআই মেশিনের মধ্যে রাজেশের প্রাণ প্রদীপ নিভে যায়। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্যই এম আর আই মেশিনের রুমের ধাতব বস্তু নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এমআরআই মেশিন দ্বারা চৌম্বক শক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষের শরীরের ভেতরের ছবি তোলা হয়। এই মেশিনের ভিতরে যেতে বেশিরভাগ মানুষই ভয় পায় কারণ মেশিনের ভিতর থেকে কাউকে দেখা যায় না।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুকের পরিচিতি
এছাড়া মেশিনটি ধাতব সকল পদার্থ নিজের মধ্যে টেনে নিতে পারে। মেশিনের সামনে ধাতব কিছু রাখলে চলে যাবে মেশিনের ভেতরে এই ঘটনায় বেশিরভাগই মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। এম আর আই মেশিন রুমে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুব বেশি নয় কারণ কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করে।
নিষিদ্ধ ধাতব পদার্থ
- কানের দুল
- নাকের নোজ পিন
- গলার চেইন
- শরীরের ট্যাটু (যেসব শরীরে ট্যাটু করা থাকে জানা যায় ট্যাটুর মধ্যেও ধাতব পদার্থ থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে)
- কানের এয়ার রিং
- হার্টের রিং
- শরীরে কোন রড ঢুকানো থাকলে
- মোবাইলের চার্জার
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url